নিউজ ডেস্ক ::
একাত্তরে পাকিস্তানি হায়েনাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীকে ‘এনজিও’ তথা ‘বেসরকারি সংস্থা’ হিসেবে অভিহিত করেছে ওয়াশিংটন প্রশাসন। ২০ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সারা বিশ্বে ২০১৭ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির আলোকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর এনআরবি নিউজ।
প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে এ বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে সচেতন প্রবাসীরাও হতভম্ব। তবে এ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সবিস্তারে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণের দায় বার্মা প্রশাসনকে নিতেই হবে। মানবিক বিপর্যয়ের জন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।
শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার বাংলাদেশের আইনে থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকার তা সীমিত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে। ‘তবে জামায়াতে ইসলামী’ নামক একটি এনজিওকে ঘরোয়া বৈঠকের অনুমতিও দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সময়ের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এখন এনজিও হিসেবে সভা করতে চেয়েও সে সুযোগ পায়নি। গত ৯ অক্টোবর জামায়াতের আমির, ডেপুটি আমির, মহাসচিবসহ ৯ জনকে আটক করা হয় ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে। এ আটক প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। এ প্রতিবেদনে মিডিয়ার স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া খুবই সরব এবং নিজ নিজ মতামত নিঃসংকোচে প্রকাশ করছে। তবে যেসব মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করে তারা সরকারের পক্ষ থেকে নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানে বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও সরকার কখনো কখনো সে অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না। কথা বলার অধিকারের প্রতি সরকারের একটি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আবার কোনো কোনো সাংবাদিকও নিজে থেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারের দমন-পীড়নের আতঙ্কে। সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রকাশনার লাইসেন্স প্রদানে রাজনৈতিক তদবির ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরাই সাধারণত লাইসেন্স পায় বলে উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে। বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার আইন থাকলেও দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এগোচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে ন্যস্ত করা হয়। একই বছরে সুপ্রিম কোর্ট সেই সংশোধনীকে সংবিধানের পরিপন্থী হিসেবে রুলিং দেয়। এরপর প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী নানা অভিযোগ উত্থাপন করলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগ করতে হয়। প্রধান বিচারপতিকে দেশ ত্যাগও করতে হয়। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি দাবি করেছেন, সরকার তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন, যদিও সরকার তা অস্বীকার করেছে। এ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বছরের শেষ নাগাদও সরকারপ্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকেন। আর সরকারের এসব কথাবার্তাকে মানবাধিকার নিয়ে কর্মরতরা রাজনৈতিক অভিসন্ধিপূর্ণ বলে অভিযোগ করেছেন। মানবাধিকার নিয়ে কর্মরতদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাটর্নি এবং আদালতের কর্মকর্তারা বহু আসামির কাছেই ঘুষ দাবি করছেন। আর এভাবে ঘুষ যারা চাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আইন ও শালিস কেন্দ্রের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ক্রসফায়ারে ১৬২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অধিকার নামক আরেকটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে ১১৮ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলা হয়েছে, গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাবস্থায় ৫৩ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত ৪২ বছরের প্রথা অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান। এরপরই এ উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংকালে বিব্রতবোধ করেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপ-সহকারী মন্ত্রী মাইকেল কোজ্যাক। শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ার প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক মার্কিন মিডিয়াকে আক্রমণ করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জানতে চেয়েছিলেন, নিজে মিডিয়াকে জনগণের শত্রু হিসেবে অভিহিত করার সময়ে অন্য দেশের মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে দাদাগিরি দেখানোর মধ্যে কতটা শালীনতা রয়েছে। কিংবা এ ধরনের মতামত প্রকাশকে সচেতন বিশ্ব কীভাবে গ্রহণ করবে? এর সরাসরি জবাব না দিয়ে নানা দেশের প্রসঙ্গ এবং এটি করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী। এ রিপোর্টে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না বলেও দাবি করেন কোজ্যাক।
ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজ প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শন : প্রফেসর কর্নেল ল্যান লাইলেসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আর্মি ওয়ার কলেজের ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২০ এপ্রিল জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন পরিদর্শন করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অব্যাহত সুনামের পরিপ্রেক্ষিতে এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অংশ হিসেবে প্রতিবছরই ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শনে আসে। ২৫ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে ওই কলেজে অধ্যয়নরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান।
পাঠকের মতামত: